মো. সেকেন্দার আলম, স্টাফ রিপোটার :
মধুমতি নদীর ভয়াবহ ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর, টগরবন্দ ও পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি-ঘরসহ শত শত একর ফসলি জমি। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, সড়ক, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন স্থাপনা। মানচিত্র পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে টগরবন্দ ও গোপালপুর ইউনিয়নের। আতংকে রাত কাটছে নদীপাড়ের বাড়ি-ঘরের মানুষের। ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক জিও ব্যাগ ফেলা হলেও স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। মধুমতির ভাঙন রোধে এলাকাবাসি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মানের দাবি জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টগরবন্দ ইউনিয়নের চাপুলিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেকাংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। আকুব্বর শেখ (৭০) বলেন, এ বছর ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে গুচ্ছগ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা গুচ্ছগ্রামের একপাশ থেকে বিদ্যুতের লাইন খুলে নিয়ে গেছে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ। হাসিনা বেগম বলেন, ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে গুচ্ছগ্রামের মানুষের। স্বামীহারা মহুরন বেগম (৬০) আছেন সবচেয়ে কষ্টে। নিজের ঘর হারিয়ে অন্যের ঘরে ঠাই নিলেও থাকা হয়নি সেখানে। এক দুই রাত আশ্রয় দেওয়ার পরই ঘর তেকে নামিয়ে দেয় তারা। নদী পাড়ে খোলা আকাশের নিচে ঘরের খুঁটি ধরে তাই দাড়িয়ে থাকেন।
এ ইউনিয়নের চরআজমপুর মৌজার প্রায় ৭৫ ভাগ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চরডাঙ্গা, রায়েরপানাইল,চর আজমপুর গ্রামের বাড়িঘর, গাছপালা, ফসলি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। গোপালপুর ইউনিয়নে ভাঙনের মুখে রয়েছে বাজড়া পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ, ৫৮নং বাজড়া-চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজড়া-চরপাড়া সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুর রহমানের বাড়ি, দরিদ্র হাসান চৌধুরীর বাড়ি। মসজিদ ও মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি রক্ষার্থে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও টগরবন্দ ইউনিয়ন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে না।
হাসান চৌধুরীর স্ত্রী পারভিন বেগম শিমুল (৩০) বলেন, যে কোন সময় তার শেষ সম্বল ভিটে-মাটি নদীগর্ভে চলে যাবে কিন্তু সেখানে বালুর বস্তা ফেলছে না। মাত্র একশ গজ দূরে বালুর বস্তা দিলেও তার বাড়ির দিকে দিচ্ছে না। পারভিন বেগম, মোহাম্মদ হোসেন (৫০), আলেয়া বেগম (৭২), নুরজাহান বেগমসহ (৯৫) অনেকেই টগরবন্দ ইউনিয়নের জিও ব্যাগ না ফেলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে ২ নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইনামুল হাসান বলেন, এ পর্যন্ত ভাঙ্গন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মানের দরকার।
ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।